Published By: Subhra Chatterjee
Last Updated: July 06, 2024, 6:30 am (IST)
কোলকাতাঃ পশ্চিমবঙ্গ(West Bengal) ভারতের সবচেয়ে সুন্দর এবং মনোরম এলাকাগুলির মধ্যে একটি। যারা দেশের পূর্বাঞ্চলে বাস করেন তারা প্রায়শই রাজ্যের কিছু অংশকে ইনস্টাগ্রামে দেখা একটি ফ্রেম হিসাবে বিবেচনা করেন। উত্তরবঙ্গ যেমন তার মনোরম পাহাড় এবং সবুজের জন্য বিখ্যাত, তেমনি রাজ্যের দক্ষিণ অংশে সুন্দর নদী এবং সমুদ্র রয়েছে। রাজ্যটি(West Bengal) অত্যন্ত সুন্দর দেখায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে। পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্রচুর লোক আকৃষ্ট হয়। আমরা যখন পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) কিছু অংশ অন্বেষণ করি, এখানে বর্ষা মাসে আপনার তালিকায় থাকা উচিত এমন কিছু স্থানের দিকে নজর দেওয়া হল:
Table of Contents
পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) হেরিটেজ সুন্দরবন:
বর্ষাকালে বেড়াতে যাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) সুন্দরবন একটি অত্যন্ত উপযুক্ত স্থান। বর্ষার সময়ে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হয়। এ সময়ে চারিদিকে সবুজের সমারোহ এবং নদীগুলোতে জল বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনের অরণ্য ও জলাভূমি এক অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য তৈরি করে। সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, বানর, কুমির, এবং পাখি। বর্ষাকালে এদের জীবনযাত্রা আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।
বর্ষাকালে সুন্দরবনের নদীগুলোতে নৌকায় ভ্রমণ করা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। এছাড়া, বর্ষার সময় নদীর জল বাড়ায় সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপে যাওয়াও সহজ হয়। এসময় প্রকৃতির সজীবতা এবং অরণ্যের রহস্যময়তা ভ্রমণকারীদের মনোমুগ্ধ করে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ভেতর দিয়ে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় বনের মধ্যে বিভিন্ন প্রাণী ও পাখির কলতান শোনা যায়, যা মনকে প্রফুল্ল করে।
বর্ষাকালে বনাঞ্চলের গ্রামগুলো ইলিশ উৎসবের আয়োজন করে, যা পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন।
তবে, বর্ষাকালে সুন্দরবন ভ্রমণের সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। নদীতে জল বাড়ার ফলে স্রোতও বৃদ্ধি পায়, তাই নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত। এছাড়া, বৃষ্টির কারণে কাদা এবং পিচ্ছিল পথের কারণে হাঁটা কিছুটা কষ্টকর হতে পারে। তবুও, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণীর এক অপূর্ব মিলনস্থল সুন্দরবন বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য নিঃসন্দেহে একটি অনন্য গন্তব্য।
কালিম্পং:
বর্ষাকালে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আরেকটি সুন্দর এবং নৈসর্গিক স্থান হল কালিম্পং। পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) এই ছোট্ট শহরটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্ত পরিবেশ এবং মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের জন্য পরিচিত। বর্ষার সময়ে কালিংপংয়ের পাহাড় ও উপত্যকাগুলো সবুজে ঢাকা পড়ে, যা ভ্রমণকারীদের মনোমুগ্ধ করে।
বর্ষাকালে কালিম্পংয়ের বিভিন্ন উদ্যান ও বাগান, যেমন ক্যালিম্পং ক্যাকটাস নার্সারি এবং ধোপরার ঝরনা, আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে। পাহাড়ি পথে হাঁটা, ট্যুরিস্ট স্পট পরিদর্শন, এবং স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা করা এসময় খুবই আনন্দদায়ক হয়। তিস্তা নদীর ধারে বসে বৃষ্টির শব্দ শোনা এবং মেঘে ঢাকা পাহাড়ের দৃশ্য উপভোগ করা ভ্রমণকারীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
কালিম্পংয়ের বিভিন্ন মনাস্ট্রি, যেমন জং ডং পালরি ফো ব্রাং মনাস্ট্রি এবং থংসা গোম্পা, বর্ষাকালে আরও মেঘে আবৃত হয়ে রহস্যময় রূপ ধারণ করে। এছাড়া, ডেলো পার্কে থেকে কালিংপংয়ের বিস্তৃত দৃশ্য এবং দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গের ঝলমলে রূপ দেখা যায়, যা বর্ষাকালে মেঘের চাদরে আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে।
তবে বর্ষাকালে ভ্রমণের সময় বৃষ্টির কারণে কাদা এবং পিচ্ছিল পথে হাঁটা কিছুটা কষ্টকর হতে পারে। তাই, পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে এবং সঠিক সময় বেছে নিয়ে কালিম্পং ভ্রমণে গেলে এ গন্তব্যটি ভ্রমণকারীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি:
কেউ যদি বনাঞ্চল উপভোগ করতে চান তবে তাদের উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে যাওয়া উচিত। এই দুটি জায়গা উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণী এবং চা-বাগানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। বর্ষার সময়ে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ আরও সজীব এবং আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
আলিপুরদুয়ার:
আলিপুরদুয়ারে রয়েছে বিখ্যাত বক্সা টাইগার রিজার্ভ, যেখানে বাঘ, হাতি, হরিণসহ নানা বন্যপ্রাণী দেখা যায়। বর্ষায় বক্সার সবুজ বন ও নদীগুলো মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। জয়ন্তী নদী ও জয়ন্তী মহলও বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চমৎকার স্থান। এছাড়া, চিলাপাতা বন ও ডুয়ার্স অঞ্চলের অন্যান্য জায়গাগুলো বর্ষায় সবুজে ঢেকে যায়, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ।
জলপাইগুঁড়ি:
পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) জলপাইগুঁড়ি তার চা-বাগান, নদী এবং বনাঞ্চলের জন্য বিখ্যাত। বর্ষাকালে জলপাইগুঁড়ির চা-বাগানগুলোতে সবুজের সমারোহ দেখা যায়, যা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। গরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং চাপরামারি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বর্ষায় আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে, যেখানে বিভিন্ন প্রাণী ও পাখি দেখা যায়। তিস্তা ও তোর্সা নদীর ধারে বসে বৃষ্টির ধারা উপভোগ করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
বর্ষাকালে এ দুটি জায়গার সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণী আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তবে, বর্ষার কারণে রাস্তাঘাট কাদা এবং পিচ্ছিল হতে পারে, তাই ভ্রমণের সময় উপযুক্ত প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। সঠিক সময়ে এবং সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুঁড়ি ভ্রমণে গেলে এটি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
দার্জিলিং:
বর্ষাকালে বেড়াতে যাওয়ার জন্য দার্জিলিং একটি অসাধারণ স্থান। পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) এই পাহাড়ি শহরটি তার অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম চা-বাগান, এবং মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি দৃশ্যের জন্য বিশ্ববিখ্যাত। বর্ষার সময়ে দার্জিলিংয়ের চারপাশ সবুজে মোড়া থাকে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য এক অপূর্ব দৃশ্য।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
বর্ষাকালে দার্জিলিংয়ের চা-বাগানগুলোতে সবুজের সমারোহ দেখা যায়। মেঘে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গের দৃশ্য এসময় আরও রহস্যময় ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতা অনন্য, যদিও বর্ষায় মেঘের কারণে কখনও কখনও তা ঢেকে যেতে পারে। তবুও, মেঘ ও কুয়াশার মাঝে সূর্যোদয়ের দৃশ্য এক অতুলনীয় অভিজ্ঞতা দেয়।
দর্শনীয় স্থান:
দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থান যেমন বাতাসিয়া লুপ, ঘুম মনাস্ট্রি, এবং পিস প্যাগোডা বর্ষাকালে এক অন্যরকম রূপ নেয়। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, যা টয় ট্রেন নামেও পরিচিত, বর্ষার মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি পথ বেয়ে চলার সময় প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
সতর্কতা:
বর্ষাকালে দার্জিলিংয়ের রাস্তাগুলো কাদা এবং পিচ্ছিল হতে পারে, তাই হাঁটার সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বৃষ্টির কারণে হালকা শীতও অনুভূত হতে পারে, তাই গরম পোশাক নেওয়া উচিত। ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নেওয়া ভালো, যাতে হঠাৎ বৃষ্টির কবলে না পড়তে হয়।
দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোমুগ্ধকর চা-বাগান এবং পাহাড়ি পরিবেশ বর্ষাকালে ভ্রমণকারীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
দীঘাঃ
বর্ষাকালে বেড়াতে যাওয়ার জন্য দীঘা একটি উপযুক্ত স্থান। পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত দীঘা তার সমুদ্রসৈকতের জন্য বিখ্যাত। বর্ষার সময়ে দীঘার পরিবেশ আরও সজীব এবং মনোরম হয়ে ওঠে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
বর্ষাকালে দীঘার সমুদ্রসৈকত এবং এর আশেপাশের অঞ্চল সবুজে মোড়া থাকে। সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে বৃষ্টির ঝিরঝির আওয়াজ মিলে এক অপূর্ব সুর তৈরি করে। দীঘা সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টির মাঝে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগে। নতুন দিঘা ও পুরনো দীঘা উভয় সৈকতেই বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
দর্শনীয় স্থান:
দীঘায় ঘুরতে যাওয়া যায় দিঘা মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী দেখা যায়। শংকরপুর, যা দীঘা থেকে কিছু দূরে অবস্থিত, আরও একটি সুন্দর সমুদ্রসৈকত যেখানে বর্ষার সময় বৃষ্টির মাঝে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাজপুর এবং মন্দারমণি দীঘার কাছেই অবস্থিত আরও দুটি জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত, যেখানে বর্ষার সৌন্দর্য আরও উপভোগ করা যায়।
সতর্কতা:
বর্ষাকালে সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সমুদ্রের ঢেউ এই সময় বেশি উত্তাল হতে পারে, তাই স্নানের সময় সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, বৃষ্টির কারণে কাদা এবং পিচ্ছিল পথে হাঁটা কিছুটা কষ্টকর হতে পারে।
বর্ষাকালে দীঘার সমুদ্রসৈকত এবং আশেপাশের এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর থাকে। বৃষ্টির মধ্যে সমুদ্রের দৃশ্য এবং পরিবেশ ভ্রমণকারীদের মনোমুগ্ধ করে। সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে দীঘায় বর্ষাকালে বেড়াতে গেলে এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে।