Headlines

এক দামাল হাতির আক্রমণে এক প্রবীণ বনকর্মীর মৃত্যু ! কিন্তু হাতির এমন আচরনের কারণ কি…..

Published by: Kingshuk Roy

Last Updated: 9 June 2024, 3:30 pm, (IST)

আলিপুরদুয়ার: দিন কয়েক আগে এক দামাল হাতির আক্রমনে একজন বনকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের(Uttar Banga) বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জয়ন্তী রেঞ্জে এক প্রবীণ বন কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই মর্মান্তিক এবং এই ঘটনা বনাঞ্চলের বন্যপ্রাণী এবং মানববসতির মধ্যে সম্পর্কের জটিলতার দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হাতির আক্রমণে এই বন কর্মীর মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, এটি একটি বৃহত্তর সমস্যা যা এই অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মধ্যে সঙ্গতির অভাব নির্দেশ করে।

জয়ন্তী রেঞ্জের(Uttar Banga) ঘটনার বিবরণ

এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গের(Uttar Banga) বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জয়ন্তী রেঞ্জে। এ বছরের প্রথোমার্ধ্যেই শুরু হয়েছিল জাতীয় বন্যপ্রানী গননার কাজ। কাজটি খুবই ঝুঁকিপূর্ন। কিন্তু কর্তব্যের খাতিরে সাতসকালেই রেঞ্জের প্রবীণ কর্মী কায়েম মিঁয়া(৫৭) গিয়েছিলেন জঙ্গলের একদম গভীরে। কয়েকজন সঙ্গী সাথীও তার সঙ্গে ছিলেন। তিনি জয়ন্তীর স্থানীয় এলাকা, কার্তিকার বাসিন্দা।

ঐ অভিশপ্তদিনের দিন সকাল আটটা নাগাদ কায়েম এবং আরও কয়েকন বনকর্মী জয়ন্তী রেঞ্জের গভীরে পুথুরি পেরিয়ে তাসিগাঁও ওয়াচ টাওয়র এলাকায় যান। এবং সঙ্গে পুরানো আমলের একটি বন্দুকও নিয়ে যান।

এমনই সময় ঐ জঙ্গলের(Uttar Banga) এক দামাল বুনো হাতি তাদের পথ অবরুদ্ধ করে। এবং কায়েমকে সামনে পেয়ে শুঁড়ে তুলে এক আছাড় মারে। এতে কায়েম ভীষণ রকমে জখম হন। ঘটনাস্থলেই তাঁর ভীষণ রক্তক্ষরন শুরু হয় এবং কিছু সময় পর তিনি মৃত্যু কোলে ঢোলে পড়েন। অন্য বনকর্মীরা তখন দিশাহীন হয়ে পড়ে এবং বন্দুকধারী কর্মীটি শূন্যে এক রাউন্ড গুলিও ছোড়েন। কিন্তু কিছু সময়ের মধ্যই বন্দুকটি অকেজো হয়ে যায়। এরপর তারা ঐ বুনো হাতির রুদ্র মূর্তি দেখে নিজেদের প্রান বাঁচাতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন।

দুর্ঘটনাস্থলটি জঙ্গলের এতটাই গভীরে যে, খবর পেয়ে রেঞ্জের বনকর্তারা সেখানে পৌঁছানোর আগেই কায়েমের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই কায়েমের গ্রাম এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা উত্তেজিত হয়ে রেঞ্জ অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। স্থানীয় থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

Uttar Banga

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলি সরকার এবং বন বিভাগের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা দাবি করছে যে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এবং বন কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। অপরদিকে, সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তারা এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

রাজ্যের বনমন্ত্রী ঘটনাটির জন্য দুখঃ প্রকাশ করেছেন এবং সবধরনের ক্ষতিপূরনের আশ্বাস দিয়েছেন।

সমস্যার মূল কারণ

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প(Uttar Banga) এবং অন্যান্য বনাঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়া নতুন কিছু নয়। এর মূল কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল:

  1. মানববসতি ও বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষ: বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে, যার ফলে বন্যপ্রাণীরা মানুষের আবাসস্থলে চলে আসছে এবং সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে।
  2. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব: বন কর্মীরা অনেক সময় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হন, যা তাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
  3. বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উপযুক্ত ব্যবস্থা: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং সম্পদের অভাবও একটি বড় সমস্যা।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি:

  1. সচেতনতা বৃদ্ধি: বন কর্মীদের এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বন্যপ্রাণীর আচার-আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  2. প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম: বন কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে যাতে তারা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।
  3. মানববসতি ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সমন্বয়: মানুষের বসতি এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে যাতে সংঘর্ষের ঘটনা কমে আসে।
  4. বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা: বন্যপ্রাণীর আচরণ এবং চলাচল পর্যবেক্ষণ করার জন্য আরও গবেষণা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

উপসংহার

উত্তরবঙ্গের(Uttar Banga) বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জয়ন্তী রেঞ্জে এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদেরকে একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করায়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি সামগ্রিক এবং সুসংহত কৌশল গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। সরকার, বন বিভাগ, এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ভারতের সবচেয়ে সুন্দর রেল স্টেশনগুলি… ভারতের কম পরিচিত উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থলগুলি… ভারতের ব্যস্ত রেল স্টেশনগুলি… দক্ষিণ ভারতীয় প্রাতঃরাশের সেরা খাবারগুলি… ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকারী দেশগুলি…