Published By: Soumya Mukherjee
Last Updated: 10 June, 2024, 11:30 am (IST)
কোলকাতাঃ- ধূমপান(Smoking) মানুষের শরীরকে ভেতর থেকে পুড়িয়ে দেয়। এর প্রভাব কতোটা মারাত্মক হতে পারে তা বিভিন্ন সার্ভের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়।
ধূমপানের বিষয়ে নিম্নে বিশদে আলোচনা করা হল।
Table of Contents
ধূমপানের(Smoking) ফলে মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থের নির্গমন
ধূমপান(Smoking) হল এমন একটি অভ্যাস যা তামাকের ধোঁয়া শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ধূমপানের ফলে প্রচুর ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ধূমপান করার সময় তামাক পোড়ানোর ফলে যে ধোঁয়া নির্গত হয়, তাতে প্রায় ৭,০০০টিরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যার মধ্যে অন্তত ৭০টি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
প্রধান রাসায়নিক পদার্থসমূহ:
- নিকোটিন: নিকোটিন একটি শক্তিশালী আসক্তি সৃষ্টিকারী পদার্থ, যা ধূমপায়ীদের তামাকের প্রতি নির্ভরশীল করে তোলে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
- টার (Tar): এটি তামাকের ধোঁয়া থেকে উৎপন্ন হয় এবং ফুসফুসে জমা হয়। টার বিভিন্ন ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
- কার্বন মনোক্সাইড (CO): এটি একটি বিষাক্ত গ্যাস যা রক্তে অক্সিজেনের পরিবর্তে হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, যা হৃদযন্ত্র ও অন্যান্য অঙ্গের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে।
- ফরমালডিহাইড: এটি একটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ যা বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
- অ্যামোনিয়া: এটি নিকোটিনের শোষণ বৃদ্ধি করে এবং তামাকের ধোঁয়ার ক্ষতিকর প্রভাব বাড়ায়।
- বেনজিন: এটি একটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ যা লিউকেমিয়া এবং অন্যান্য রক্তের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
- পলিয়ারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (PAHs): এগুলি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এবং তামাকের ধোঁয়ায় প্রচুর পরিমাণে থাকে।
ধূমপানের(Smoking) ক্ষতিকারক প্রভাব
ধূমপানের ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিভিন্ন গুরুতর রোগের সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রভাব হল:
১. ফুসফুসের রোগ
ধূমপান(Smoking) ফুসফুসের প্রধান শত্রু। এর ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার, ক্রনিক ব্রংকাইটিস এবং এমফাইসিমার মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে। তামাকের ধোঁয়ায় থাকা টার ফুসফুসের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
২. হৃদরোগ
ধূমপান(Smoking) হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি রক্তনালীর প্রাচীরকে শক্ত ও সংকীর্ণ করে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কার্বন মনোক্সাইড রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতাকে হ্রাস করে।
৩. ক্যান্সার
ধূমপান(Smoking) শুধু ফুসফুসের ক্যান্সার নয়, বরং মুখ, গলা, পাকস্থলী, কিডনি, মূত্রাশয় এবং প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়। তামাকের ধোঁয়ায় থাকা বিভিন্ন ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৪. প্রজনন সমস্যা
ধূমপান(Smoking) পুরুষ ও নারীদের প্রজনন ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি শুক্রাণুর গুণমান কমিয়ে দেয় এবং নারীদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। গর্ভবতী নারীদের ধূমপান সন্তানের জন্মগত ত্রুটি এবং নিম্ন জন্ম ওজনের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা
ধূমপান(Smoking) শ্বাসযন্ত্রের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), ক্রনিক ব্রংকাইটিস এবং অ্যাজমার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপানের ধোঁয়া শ্বাসনালীর প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা বাড়ায়।
৬. ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা
ধূমপান(Smoking) ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয়, যার ফলে বিভিন্ন সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। ধূমপায়ীরা সাধারণত ঠান্ডা, ফ্লু এবং নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণে বেশি আক্রান্ত হয়।
ধূমপান(Smoking) ত্যাগের প্রতিকার
ধূমপান ত্যাগ করা কঠিন হলেও এটি সম্ভব এবং এর ফলে স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধূমপান ত্যাগের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল রয়েছে, যা ধূমপায়ীদের জন্য সহায়ক হতে পারে।
১. মানসিক প্রস্তুতি
ধূমপান(Smoking) ত্যাগ করার জন্য প্রথমে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগের দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে এবং এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। ধূমপানের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং ত্যাগের উপকারিতা সম্পর্কে জানা এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে।
২. নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT)
নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT) হল একটি পদ্ধতি যা ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায়, যেমন নিকোটিন গাম, প্যাচ, লজেঞ্জেস, ইনহেলার্স এবং ন্যাসাল স্প্রে। এই থেরাপি ধূমপায়ীদের নিকোটিনের আসক্তি কমাতে সাহায্য করে এবং ধীরে ধীরে তাদের তামাক ছাড়তে সহায়ক হয়।
৩. ঔষধ
ধূমপান ত্যাগে সহায়ক কিছু প্রেসক্রিপশন ঔষধ রয়েছে, যেমন বুপ্রোপিয়ন (Zyban) এবং ভারেনিক্লিন (Chantix)। এই ঔষধগুলি মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থগুলোর উপর কাজ করে এবং ধূমপানের প্রতি আকর্ষণ কমিয়ে দেয়। তবে এই ঔষধগুলি ব্যবহারের আগে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
৪. পরামর্শ ও থেরাপি
ইন্ডিভিজুয়াল বা গ্রুপ কাউন্সেলিং ধূমপান ত্যাগের প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। পেশাদার পরামর্শদাতাদের সহায়তায় ধূমপায়ীরা তাদের আসক্তি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তা মোকাবেলা করার কৌশল শিখতে পারেন। থেরাপি ধূমপায়ীদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং তাদের ধূমপান ত্যাগের প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়।
৫. জীবনযাত্রার পরিবর্তন
ধূমপান ত্যাগের প্রক্রিয়ায় জীবনযাত্রার পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপানের স্থান ও পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা ধূমপান ত্যাগে সহায়ক হতে পারে। ধূমপায়ীরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের ধূমপানের সাথে সম্পর্কিত অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করে ধূমপান ত্যাগে সফল হতে পারেন।
৬. সাপোর্ট গ্রুপ
ধূমপান ত্যাগে সহায়তা প্রদানকারী স্থানীয় বা অনলাইন সাপোর্ট গ্রুপের সাথে যোগদান করা অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। সাপোর্ট গ্রুপের মাধ্যমে ধূমপায়ীরা অন্যান্য ধূমপায়ীদের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা ও উৎসাহ পেতে পারেন।
উপসংহার
ধূমপান(Smoking) একটি মারাত্মক ক্ষতিকারক অভ্যাস যা মানব শরীরের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এর ফলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং জীবনের মান কমিয়ে দেয়। ধূমপান ত্যাগ করা কঠিন হলেও, এটি সম্ভব এবং এর ফলে স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধূমপান(Smoking) ত্যাগের জন্য মানসিক প্রস্তুতি, সঠিক চিকিৎসা এবং পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান ত্যাগ করে সুস্থ ও সুন্দর জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ডিসক্লেইমার
লেখায় উল্লেখিত দাবি বা পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। এটি মেনে চলার আগে অবশ্যই সরাসরি বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।