Published by: Soumya Mukherjee
Last Updated: 8 June, 2024, 8:00 am (IST)
কোলকাতাঃ- আপনি জানলে আতঙ্কিত হবেন, দীর্ঘ দিন ধরেই বাজারের সব ধরনের মাছ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেয়ে যাচ্ছেন, অথচ এমন কিছু কিছু মাছ(Poison Fish) আছে যেগুলি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষ্যে মোটেই ভালো নয়। বাড়ির ছোট বাচ্চা, প্রসূতি নারী, বিশেষকরে হবু মায়েদের মেথিলমার্কারিযুক্ত মাছ খাওয়া একদমই উচিত নয়। মাছের এই বিষাক্ত উপাদান ভ্রুন এবং ছোট শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে।
কথায় আছে ভেতো বাঙালী। দুই বেলা পাতে ভাত ছাড়া বাঙালীর একদম চলে না। ভাতের সঙ্গে আর একটি খাবার বাঙালী নামের সঙ্গে প্রায় জড়িয়ে আছে সেটি হল মাছ। এমনকি শুধু বাঙালী বলে নয়, অবাঙালী অনেক ভারতীয়দের কাছে মাছ খুবই জনপ্রিয়। তাছাড়া পুষ্টিবিদেরা মাটন, চিকেনের পরিবর্তে পরিমানমত মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারন মাছ খুবই সহজপাচ্য এবং পুষ্টিগুনে ভরা।
মাছ আমাদের খাদ্যাভ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে, কিছু নির্দিষ্ট মাছ(Poison Fish) খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই প্রবন্ধে পাঁকাল, পাংগাস, তেলেপিয়া ও সামুদ্রিক টুনা মাছ খাওয়া শরীরের জন্য কীভাবে বিপদজ্জনক হতে পারে তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
Table of Contents
পাঁকাল মাছ(Poison Fish)
পাঁকাল মাছ, যা অনেকেই পছন্দ করে, বিভিন্ন কারণে বিপদজ্জনক হতে পারে। এটি প্রায়শই দূষিত জল থেকে সংগ্রহ করা হয়, যার ফলে মাছের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ যেমন পারদ, ক্যাডমিয়াম, এবং অন্যান্য ভারী ধাতু জমা হতে পারে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
- ভারী ধাতুর দূষণ: পাঁকাল মাছে উচ্চ মাত্রার পারদ এবং অন্যান্য ভারী ধাতু থাকতে পারে যা মানবদেহে প্রবেশ করলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস: দূষিত জলে বাস করা মাছগুলিতে প্রায়শই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস পাওয়া যায় যা খাদ্যবাহিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
- অ্যালার্জি: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পাঁকাল মাছ খাওয়া অ্যালার্জির কারণ হতে পারে, যা চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারে।
পাংগাস মাছ(Poison Fish)
পাংগাস মাছ সাধারণত একুয়াকালচার বা পুকুরে চাষ করা হয়। এ ধরনের চাষের ফলে মাছের খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং এতে বিভিন্ন রাসায়নিক ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
- রাসায়নিক পদার্থ: চাষের সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক ও অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ মাছের দেহে থেকে যায় যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
- পুষ্টি ঘাটতি: পাংগাস মাছের পুষ্টিমান প্রায়শই কম হয় কারণ এরা প্রাকৃতিক খাবারের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে থাকে।
- জলবাহিত রোগ: অপর্যাপ্ত জল পরিশোধনের ফলে মাছের মধ্যে বিভিন্ন জলবাহিত রোগের জীবাণু থাকতে পারে যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তেলেপিয়া মাছ(Poison Fish)
তেলেপিয়া মাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং কম খরচে উৎপাদনযোগ্য হওয়ায় এটি সারা বিশ্বে প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। তবে, এটি খাদ্য হিসাবে কিছু ঝুঁকি বহন করে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
- ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড: তেলেপিয়া মাছের মধ্যে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।
- খারাপ পরিবেশে চাষ: অনেক ক্ষেত্রে তেলেপিয়া মাছ অত্যন্ত দূষিত এবং অপুষ্ট পরিবেশে চাষ করা হয় যা মাছের গুণমান নষ্ট করে।
- জৈব দূষণ: মাছের মধ্যে বিভিন্ন জৈব দূষণ যেমন পিসিবি (পলিক্লোরিনেটেড বাইফেনাইলস) থাকতে পারে যা মানবদেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ অন্যান্য জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
সামুদ্রিক টুনা মাছ
সামুদ্রিক টুনা মাছ পুষ্টি গুণের জন্য অনেক জনপ্রিয়, তবে এটি খাওয়ার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
- পারদ দূষণ: টুনা মাছ প্রায়ই গভীর সমুদ্র থেকে ধরা হয় এবং এতে উচ্চ মাত্রার পারদ জমা হয় যা মানবদেহে স্নায়ুতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ: টুনা মাছ যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হয় তবে এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে যা খাদ্যবাহিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
- অত্যধিক শিকার: টুনা মাছের অত্যধিক শিকার পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছে যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং এতে পাওয়া পুষ্টির মানও কমে যাচ্ছে।
উপসংহার
মাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উৎস হলেও কিছু নির্দিষ্ট মাছ(Poison Fish) খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। পাঁকাল, পাংগাস, তেলেপিয়া এবং সামুদ্রিক টুনা মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এসব মাছ(Poison Fish) থেকে দূষণ এবং বিষাক্ত পদার্থের ঝুঁকি কমানোর জন্য মান নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার জন্য স্থানীয় এবং নিরাপদ উৎস থেকে মাছ সংগ্রহ করা উচিত।
ডিসক্লেইমার
লেখায় উল্লেখিত দাবি বা পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। এটি মেনে চলার আগে অবশ্যই সরাসরি বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।