Published By: Subhra Chatterjee
Last Updated: 9 June, 2024, 9:30am (IST)
কোলকাতা: কোলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো(Metro) পরিষেবার নতুন শাখার উদ্বোধন নিয়ে শহরজুড়ে উন্মাদনা লক্ষ্যনীয়। গঙ্গা নদীর নীচ দিয়ে হাওড়া ও এসপ্ল্যানেডের মধ্যে এই মেট্রো লাইনের উদ্বোধন একটি বিশাল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। মানুষের মনে এই মেট্রো শাখা নিয়ে আগ্রহ ও উত্তেজনা স্পষ্ট। রাতভর জেগে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাওয়া মানুষের দৃশ্য প্রতিটি কোণে কোণে। এই মেট্রো শাখার নির্মাণ ও উদ্বোধন কোলকাতার মানুষের জন্য একটি গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Table of Contents
মেট্রো(Metro) শাখার নির্মাণ প্রক্রিয়া
গঙ্গা নদীর নীচ দিয়ে মেট্রো শাখার নির্মাণ একটি বিশাল প্রকৌশল কীর্তি। এই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। শক্তিশালী নদীর নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরি করা এবং তা সুরক্ষিত রাখা কোনো সহজ কাজ ছিল না। প্রকৌশলীরা অত্যন্ত নিখুঁত পরিকল্পনা ও আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এই মেট্রো শাখার নির্মাণ সম্পন্ন করেছেন।
হাওড়া ও এসপ্ল্যানেডের সংযোগ
৪-শে অক্টোবর, ১৯৮৪ সাল। কোলকাতায় প্রথমবার মেট্রো পরিষেবা শুরু হয়। মেট্রো(Metro)-র ঐ যাত্রা ছিল দেশের মধ্যেও প্র্রথম। কোলকাতায় পরিষেবা শুরু হওয়ার পর থেকেই, অল্প অল্প করে মেট্রো তার শাখা-প্রশাখা ছড়ানো শুরু করেছিল। বর্তমানে প্রস্তাবিত ইষ্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবায়, মেট্রো হাওড়া-ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর-ফাইব পর্যন্ত্য যাওয়ার অনুমতী পেয়েছে।
এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথের শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক সেক্টর-ফাইব এর মধ্যেকার পরিষেবা অনেকদিন আগেই শুরু হয়েছে। এদিকে শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যাণেড এর মধ্যে অবস্থিত বৌবাজার সংলগ্ন অঞ্চলে বিপর্যয়ের দরুন কিছু কাজ বাকী রয়েছে।
অবশিষ্ট পথ, এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া-ময়দান এর মধ্যেকার পরিষেবা নিয়ে, কোলকাতা তথা আমাদের রাজ্য, এমনকি আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও কৌতূহল ছিল। কৌতূহলের বিষয় ছিল, মেট্রো-র গঙ্গার নীচ দিয়ে পারাপার। যেটি এসপ্ল্যানেড ও হাওড়া-ময়দান এর মধ্যেকার যাত্রাপথের ছোটো একটি অংশ। এই অংশেও পরিষেবা চালু হয়ে, মেট্রো(Metro) ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাল।
হাওড়া একটি বিশাল রেল স্টেশন যা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীদের নিয়ে আসে। অন্যদিকে, এসপ্ল্যানেড শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এই দুটি স্থানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করায় শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও মজবুত ও দ্রুত হবে। এর ফলে যাত্রীদের যাতায়াতের সময়ও অনেক কমে যাবে।
মানুষের উন্মাদনা
নতুন মেট্রো শাখার উদ্বোধন নিয়ে বেশকিছু ধরে কোলকাতার মানুষের মধ্যে প্রবল উন্মাদনার সঞ্চার হয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই নতুন মেট্রো শাখার প্রথম যাত্রী হতে চায়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মেট্রো শাখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন মানুষের মনের মধ্যে উত্তেজনা ও উচ্ছ্বাস।
ঘড়ি কাঁটায় কাঁটায় তখন সকাল সাতটা, মেট্রো(Metro) প্রথম যাত্রা শুরু করে। তখন আবেগে বহু মানুষের চোখে জল। মেয়েরা উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে শুরু করলেন উলুধ্বনি। প্রবীণদের বাকরুদ্ধ। নবীনরা একে অপরের সঙ্গে হাত মেলালেন। কেউ কেউ আবার পরস্পরের মধ্যে আলিঙ্গনও করলেন। কারণ ইতিহাসের সাক্ষী এনারা প্রত্যেকেই।
যাত্রা শুরুর পূর্বে এই ঐতিহাসিক যাত্রার সব যাত্রীদের মেট্রো-র পক্ষ থেকে শুভেচ্ছাবর্তা দেওয়া হয়। আর হাওড়া স্টেশন পার করতেই মেট্রো(Metro)-র মধ্যে মায়াবী কণ্ঠে ঘোষিত হল, ‘এবার আমরা গঙ্গার নীচ দিয়ে যাব। উপযুক্ত নীল আলোর মাধ্যমেই এই যাত্রা পথটুকু আপনারা নিজের মতো করে উপভোগ করুন।’ নীল আলো জ্বলতেই মেট্রো-র সব যাত্রীদের মধ্যে তুমুল উন্মাদনা দেখা দেয়। যাত্রীরা তখন উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। কারোর মুখে গঙ্গা মাই কি জয় ধ্বনি তো, কারোর মুখে ভারতমাতা কি জয় ধ্বনি।
এরপর ৪৬ সেকেন্ড ধরেই চলল মোবাইলে সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি। কিংবা মেট্রো-র কাঁচ দিয়ে বাইরের পরিবেশ দেখার জন্য দৌড়োদৌড়ি।
রাতভর জেগে থাকার পরিকল্পনা
কোলকাতার মানুষরা রাতভর জেগেও এই মেট্রো শাখার উদ্বোধনের সাক্ষী হতে চায়। নতুন মেট্রো(Metro) শাখার প্রথম ট্রেন যাত্রায় অংশ নিতে বহু মানুষ রাতভর লাইন দিয়ে অপেক্ষা করেছে। হাওড়ার এক প্রবীণ নাগরিকের মতে, তিনি সারারাত কাটিয়েছেন স্টেশন চত্বরের আশেপাশে। শুধু তাই নয়, আজ থেকে ৪০ বছর আগে কোলকাতায় প্রথমবার মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার সেই ঐতিহাসিক প্রথম দিনে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন মানুষও, এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে আজকেও উপস্থিত ছিলেন। সবার মধ্যে ছিল এই প্রথম যাত্রার অংশীদার হওয়ার উত্তেজনা ও গর্বের অনুভূতি।
শহরের ভবিষ্যত
এই মেট্রো শাখার উদ্বোধন কোলকাতার ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও উন্নত করবে। যাত্রীদের যাতায়াতের সময় কমবে, ট্রাফিক কমবে এবং শহরের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে শহরের অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নত হবে।
মেট্রো(Metro)-র এই যাত্রা পথ চালু হওয়ায় শহর হাওড়া কিংবা শহরতলি থেকে কাজের উদ্দেশে কোলকাতায় আসা মানুষজনের যে কত বড়ই সুবিধা হল তা আর বলবার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, উনারা কোন যানজট ছাড়াই কম সময়ে এবং কম খরচে সহজেই কোলকাতায় পৌঁছে যেতে পারবেন। এতে উনাদের সময়ের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি আর্থিক দিক থেকেও উনারা লাভবান হবেন। সেইসঙ্গে মেট্রো-র মানচিত্রে কোলকাতার যমজ শহর হাওড়াও যুক্ত হল। এবং শহর হাওড়া, কোলকাতার আরও কাছাকাছি চলে এল।
উপসংহার
গঙ্গা নদীর নীচ দিয়ে হাওড়া ও এসপ্ল্যানেডের মধ্যে মেট্রো(Metro) শাখার উদ্বোধন কোলকাতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। মানুষের মধ্যে যে উন্মাদনা ও উত্তেজনা পরিলক্ষীত হয়েছে , তা এই মেট্রো শাখার গুরুত্বকেই প্রমাণ করে। রাতভর জেগে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাওয়ার ইচ্ছা কোলকাতার মানুষের ভালোবাসা ও গর্বের প্রতীক। এই মেট্রো শাখা কোলকাতার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে, যা শহরের উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।