Published By: Anjan Majumder
Last Updated: 9 June, 2024, 9:30 pm (IST)
নিউ দিল্লী: গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মালদ্বীপে(Maldives) প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ নির্বাচনের আগে ‘ইণ্ডীয়া আউট’ শ্লোগানের মাধ্যমে মহম্মদ মুইজ্জু মালদ্বীপের জনগনের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। এমনই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার দরুন ঐ নির্বাচনে মুইজ্জু-ই জয়লাভ করেন, এবং তিনিই মালদ্বীপের নব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে জনগনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মাথায় রেখেই মুইজ্জু তাঁর অবস্থানে অনড়। জানুয়ারি মাসে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে ছিল যে ভারত বাধ্য হয়েই মালদ্বীপ এর সঙ্গে বৈঠকে বসে। এবং ২-রা ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে বৈঠকে স্থির হয়, মালদ্বীপ থেকে ভারত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।
এরপর মালদ্বীপ এর নব্য প্রেসিডেণ্ট মুইজ্জু কার্যত হুঁশিয়ারী দিয়েই বলেছিলেন, ভারতকে তাদের সেনাবাহিনী ১০ মে-র মধ্যে মালদ্বীপ থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
Table of Contents
মালদ্বীপ(Maldives) থেকে ভারতের সেনাবাহিনী প্রত্যাবর্তন: একটি সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষণ
মালদ্বীপ একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, যা ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মালদ্বীপে ভারতের সেনাবাহিনীর অবস্থান ও তাদের প্রত্যাবর্তন একটি জটিল বিষয়, যা সামরিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
মালদ্বীপের(Maldives) প্রেক্ষাপট
মালদ্বীপ প্রায় ১২০০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র। এক দ্বীপ এর সঙ্গে অন্য দ্বীপের সরাসরি যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। এর সামুদ্রিক এলাকা ও সামরিক কৌশলগত অবস্থানের কারণে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মালদ্বীপের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন ও মৎস্য সম্পদ নির্ভরশীল।
রাজনীতিক অস্থিতিশীলতা
মালদ্বীপের(Maldives) রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা প্রায়শই দেখা যায়। ২০১৮ সালে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতার কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক সংকটের ফলে মালদ্বীপের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতের কৌশলগত স্বার্থ
সামরিক কৌশল
ভারতের জন্য মালদ্বীপ(Maldives) একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশলগত স্থান। ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপথগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এ অঞ্চলে নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতের সামরিক উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কূটনৈতিক সম্পর্ক
মালদ্বীপের(Maldives) সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতা, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। মালদ্বীপের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভারত বিভিন্ন সময়ে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
সেনাবাহিনীর অবস্থান ও প্রত্যাবর্তন
প্রেক্ষাপট ও কারণ
মালদ্বীপে(Maldives) ভারতের সেনাবাহিনীর অবস্থানের পেছনে প্রধান কারণ ছিল ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি মউমুন আবদুল গাইয়ূমের সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ ঘটে, এবং সেই সময় ভারত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অপারেশন ক্যাকটাসের মাধ্যমে অভ্যুত্থান দমন করে। এর পর থেকেই মালদ্বীপে ভারতের সামরিক উপস্থিতি দৃঢ় হয়।
প্রত্যাবর্তনের কারণ
ভারতের সেনাবাহিনীর প্রত্যাবর্তনের কয়েকটি প্রধান কারণ :
- মালদ্বীপের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি : ‘ইণ্ডীয়া আউট’ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়া মালদ্বীপ এর নব্য প্রেসিডেণ্ট মুইজ্জু তাঁর আবস্থানে অনড়। এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ভারত মনে করেছে যে মালদ্বীপে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা ঠিক নয়।
- স্থানীয় প্রতিরোধ: মালদ্বীপের জনগণ ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ভারতের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে গভীর অসন্তোষ , যা প্রত্যাবর্তনের অন্যতম একটি কারণ ।
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: ভারত তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখতে ভারতের এই পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রত্যাবর্তনের প্রভাব
ভারতের সেনাবাহিনীর প্রত্যাবর্তনের ফলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখা দিতে পারে:
- মালদ্বীপের(Maldives) স্থিতিশীলতা: মালদ্বীপে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সরকারের ওপর বেশি দায়িত্ব অর্পিত হবে।
- আঞ্চলিক নিরাপত্তা: ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও সামুদ্রিক অঞ্চলের সুরক্ষা বজায় রাখতে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে সামরিক ও কৌশলগত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: ভারতের সেনাবাহিনীর প্রত্যাবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও উন্নত হতে পারে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
উপসংহার
মালদ্বীপ(Maldives) থেকে ভারতের সেনাবাহিনীর প্রত্যাবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। মালদ্বীপের(Maldives) স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, ভারত মহাসাগরের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।