Published by: Koustab Roy
Last Updated: 8 June, 2024, 9:30pm (IST)
নিউ দিল্লীঃ–সে এক সময় ছিল যখন, কোনো ছেলের মা কিংবা কোনো গাঁয়ের বধূ অপেক্ষায় প্রহর গুনতো রানারদের(Mailmen) জন্য। বহুদূর থেকে আসা চিঠির সারমর্ম তাদের জীবনকে সুখ-দুখঃ-কান্নায় ভরিয়ে তুলতো।
সময় দ্রুত এগিয়েছে। সময়ের সাথে বদলেছে পৃথিবী। সেই সঙ্গে বদলেছে মানুষের কাজকর্ম এবং পেশাও। কিন্তু পুরোনো সেই রানার একই থেকে গেছে , একটুকুও বদলায়নি। তবে বদলেছে তার কাজের ধরন ।
কেন্দ্রীয় সরকার সূর্যঘর প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপনের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকায় বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ও টেকসই উৎস সরবরাহ করা। তবে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই যেটি প্রয়োজন, তা হল সঠিকভাবে বাড়িগুলো চিহ্নিত করা। এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি অবলম্বন করেছে—পোস্ট অফিসের ডাকহরকরাদের (রানার)(Mailmen) ব্যবহার।
Table of Contents
ডাকহরকরাদের ভূমিকা
ডাকহরকরারা(Mailmen) গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন, ফলে তারা প্রতিটি এলাকার খুঁটিনাটি সম্পর্কে খুবই অবগত। তারা জানেন কোন বাড়ি কোথায় অবস্থিত, সেখানে কয়জন বাসিন্দা রয়েছে, এবং এলাকার সাধারণ তথ্যাবলী সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ব্যাপক। সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বাড়িগুলো চিহ্নিত করার কাজে তাদের ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
সূর্যঘর প্রকল্পের লক্ষ্য
সূর্যঘর প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল—
- বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান: দেশে অনেক গ্রামীণ এলাকা আছে যেখানে এখনও বিদ্যুতের সমস্যা প্রকট। সোলার প্যানেল ব্যবহার করে সেইসব এলাকার বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
- পরিবেশ সুরক্ষা: সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে। এতে কোন রকমের দূষণ হয় না।
- অর্থনৈতিক সাশ্রয়: সোলার প্যানেল একবার স্থাপন করার পর তা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করে। বিদ্যুৎ বিলের ব্যয় কমে যায়, ফলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হন।
ডাকহরকরাদের(Mailmen) মাধ্যমে বাড়ি চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া
১. তথ্য সংগ্রহ
ডাকহরকরারা তাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করবেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই তথ্যগুলো অন্তর্ভুক্ত করবে—
- বাড়ির অবস্থান (জিপিএস কুওর্ডিনেটস সহ)
- বাড়ির বাসিন্দাদের সংখ্যা
- বিদ্যুৎ সরবরাহের বর্তমান অবস্থা
- বাড়ির ছাদ বা খোলা জায়গার পরিমাণ ও অবস্থা
২. তথ্য যাচাই ও সংরক্ষণ
ডাকহরকরারা সংগ্রহিত তথ্য পোস্ট অফিসের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ডাটাবেসে পাঠাবেন। সেখানে এই তথ্যগুলো যাচাই করে সংরক্ষণ করা হবে। যদি কোন বাড়ির তথ্য ভুল বা অসম্পূর্ণ হয়, তাহলে তা সংশোধন করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩. পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন
এই তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ দল প্রতিটি বাড়ির পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য উপযুক্ত বাড়িগুলো চিহ্নিত করা হবে। এই পর্যায়ে বিভিন্ন কারিগরি ও অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনা করা হবে, যেমন ছাদের আয়তন, সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ইত্যাদি।
৪. সোলার প্যানেল স্থাপন
যে বাড়িগুলো সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ক্রমে সোলার প্যানেল স্থাপন করবে। স্থাপনের পর প্যানেলের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় কারিগরি দল নিয়োগ করা হবে।
ডাকহরকরাদের(Mailmen) প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা
দিনে দিনে পুরো পৃথিবী ডিজিটাল হচ্ছে , সাথে সাথে রানারও স্মার্ট হচ্ছে। এখন সে আর খবরের বোঝা পিঠে নিয়ে দৌড়বে না। সে এখন গ্রাম থেকে শহরে দৌড়বে বাড়িতে বাড়িতে আলো জ্বালাতে। তার হাতে থাকবে স্মার্ট ফোন।
ডাকহরকরাদের এই নতুন দায়িত্ব পালন করতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকবে—
- তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি
- জিপিএস ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার
- বাড়ির ছাদ বা খোলা জায়গা মূল্যায়ন পদ্ধতি
- সাধারণ সোলার প্যানেল সম্পর্কে ধারণা
এছাড়াও, তাদেরকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন জিপিএস ডিভাইস, মোবাইল ফোন, এবং তথ্য সংগ্রহের ফর্ম সরবরাহ করা হবে। এ কাজে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রণোদনা প্রদান করা হবে।
চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
যদিও ডাকহরকরাদের(Mailmen) মাধ্যমে বাড়ি চিহ্নিতকরণ একটি কার্যকরী উপায়, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও থাকতে পারে। যেমন—
- প্রথমিক পর্যায়ে ডাটাবেস গঠনের জটিলতা: প্রচুর তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার কাজ জটিল হতে পারে। এর সমাধানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় ডাটাবেস সিস্টেম তৈরি করা যেতে পারে।
- ডাকহরকরাদের প্রশিক্ষণ: প্রশিক্ষণের মান ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক নিয়োগ করা যেতে পারে।
- সোলার প্যানেল রক্ষণাবেক্ষণ: সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হলে সোলার প্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য নিয়মিত পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপসংহার
কেন্দ্রীয় সরকারের সূর্যঘর প্রকল্প দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সমাধান। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে ডাকহরকরাদের ব্যবহার করে বাড়ি চিহ্নিতকরণ একটি বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ব্যবহার করে সহজেই সঠিক বাড়ি নির্বাচন করা সম্ভব হবে, যা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে। ডাকহরকরাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সরকারের সুপরিকল্পিত উদ্যোগ এই প্রকল্পকে সফল ও কার্যকরী করে তুলবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে পুরানো দিনের সেই রানার(Mailmen) নতুন সাজে, নতুন উদ্দ্যমে আবার দৌড়তে শুরু করেছে নিজেদের অসতিত্ত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য।