Published By: Rupam Dutta
Last Updated: 10 June, 2024, 6:30 am (IST)
কোলকাতা: বর্তমানে তিনি ফিফার(FIFA) সহকারী রেফারি। পেশায় তিনি একটি অফিসের অস্থায়ী সাফাই কর্মী। তিনি আপাদমস্তক বাঙালীও বটে। তিনি হলেন উজ্জ্বল হালদার।
Table of Contents
উজ্জ্বলের জীবন সংগ্রাম ও সাফল্য
প্রারম্ভিক জীবন
অভাবের টানাটানির সংসার। মা রাস্তার ধারে চায়ের একটি ছোটো দোকান চালান। এমন দারিদ্রের মধ্যে থেকে তো আর বড় স্বপ্ন দেখা যায় না। কিন্তু উজ্জ্বল বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি নিজে কিছুদিন মায়ের সঙ্গে চায়ের ঐ ছোটো দোকান চালিয়েছেন। উজ্জ্বল ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ করে মায়ের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেন। কখনও ক্যাটারিংয়ের কাজ করেছেন। কখনও বিক্রি করেছেন খবরের কাগজ ও দুধ।
সাফাই কর্মীর পেশায় জীবন
এভাবে চলতে চলতে তিনি একদিন কল্যাণীর একটি অফিসে অস্থায়ী সাফাই কর্মীর কাজ জুটিয়েছিলেন। কাজটি ছিল মূলত বাথরুম পরিষ্কারের। এই কঠিন পরিশ্রমী কাজটি সে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে করত। এত পরিশ্রমের মাঝেও ছেলেটির মধ্যে থেমে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা ছিল। তার সহকর্মীরা এবং স্থানীয় লোকজন তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত তার পরিশ্রম এবং সততার জন্য।
ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা
ছোটবেলায় ছেলেটির ভালোবাসার জায়গা ছিল একটাই, সেটি হল সবুজ মাঠ। আর এই ভালোবাসার জায়গা থেকেই শুরু হয় ফুটবলের প্রতি তীব্র আকর্ষন।
কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও উজ্জ্বল ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা বজায় রেখেছিলো। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ছিলো তার নেশা। তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলা এবং স্থানীয় ম্যাচগুলো দেখার মধ্যে দিয়ে তার ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে ওঠে। উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখত যে, একদিন সে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলের সাথে যুক্ত হবে।
রেফারির স্বপ্ন
উজ্জ্বলের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও, রেফারির প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ছিলো। রেফারির কাজের গুরুত্ব এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সে সচেতন ছিল। তার চোখে রেফারি হলো খেলার ন্যায্যতার প্রতীক। স্থানীয় ছোটখাটো ম্যাচগুলোতে সে রেফারিং করত এবং তার দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার জন্য সবাই তাকে প্রশংসা করত।
প্রথম বড় সুযোগ
একদিন স্থানীয় বড় একটি ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছিলেন উজ্জ্বল। তার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মাঠে খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার এই সাফল্য তাকে আরও বড় স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা জোগিয়েছে।
পরবর্তীকালে তিনি চলে যান কোলকাতা ময়দানে। ময়দানেও তিনি ভালো রেফারি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শুরু করেন। এবং এখান থেকেই একদিন ডাক আসে সান্তোষ ট্রফি খেলায়।
ফিফার(FIFA) প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণ
উজ্জ্বলের প্রতিভা এবং নিষ্ঠার খবর ময়দানের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছায়। তারা উজ্জ্বলকে ফিফার(FIFA) রেফারির প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। উজ্জ্বল এই সুযোগটি লুফে নেয় এবং প্রশিক্ষণে তার দক্ষতা প্রমাণ করে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
প্রশিক্ষণ শেষে উজ্জ্বল ফিফার(FIFA) একজন স্বীকৃত রেফারি হিসেবে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করার সুযোগ পান।উজ্জ্বলের ফিফা(FIFA) রেফারি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন মহল থকে অভিনন্দনের বার্তা ধেয়ে আসে। তার সততা, দক্ষতা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে দ্রুতই সবার নজরে নিয়ে এসেছে। উজ্জ্বল তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন।
সংগ্রামের মিষ্টি ফল
উজ্জ্বলের এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত নয়, এটি তার পরিবার এবং সমাজের জন্যও একটি গর্বের বিষয়। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, দারিদ্র্য এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি মানুষের স্বপ্নকে থামাতে পারে না, যদি সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রম থাকে।
উজ্জ্বলের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে উজ্জ্বল একজন প্রতিষ্ঠিত রেফারি(FIFA), কিন্তু তার স্বপ্ন এখানেই শেষ নয়। সে চায় আরও বড় ম্যাচ পরিচালনা করতে, এবং তরুণদের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে। তার জীবনের এই দীর্ঘ যাত্রা আমাদেরকে শেখায় যে, স্বপ্ন কখনোই ছোট নয়, যদি আমরা তাদের পূরণের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা প্রদর্শন করি।
উজ্জ্বল একজন প্রমাণিত করেছেন যে কঠিন পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং অবিচল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সবকিছুই সম্ভব। তার জীবন গল্প আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি চিরন্তন উৎস।
সমাপ্তি
উজ্জ্বলের জীবনের গল্প আমাদেরকে শিখায় যে, সাফল্য কোনো সহজ পথ নয়। এটি পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং অবিচলতার ফল। উজ্জ্বল শুধু একজন রেফারি নয়, তিনি আমাদের সকলের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার সংগ্রাম এবং সাফল্যের গল্প আমাদের সবাইকে অনুপ্রেরণা জোগায় আমাদের নিজেদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে।