Published By: Koustab Roy
Last Updated: 7 June, 2024, 6:40 am (IST)
নিউ দিল্লী: এবার থেকে রেশন দোকানে(Fair Price Shop) প্রয়োজনীয় অনান্য সব দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে ঔষধও পাওয়া যাবে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবেই এমনই অভিনব পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রকা
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি রেশন দোকানের(Fair Price Shop) সাথে খোলা হবে একটি করে ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ঔষধি কেন্দ্র’। সাধারন মানুষ যাতে কম দামে ওষুধ কিনতে পারে, এই বিষয়টি ভেবেই কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেজন্য প্রথমে ডিলারদের সঙ্গে একটি ‘মউ’ সাক্ষর হবে এবং তারপর তারা যাতে জন-ঔষধি কেন্দ্র খোলার জন্য স্বল্প সুদে ঋন পান সেটিরও ব্যাবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে ঋন দেবে ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেণ্ট ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়া।
বর্তমানে দেশজুড়ে প্রায় দশ হাজারের মতো প্রধানমন্ত্রী জন-ঔষধি কেন্দ্র ছড়িয়ে রয়েছে। ঐসব কেন্দ্র থেকে ব্র্যাণ্ডের ওষুধের তুলনায় গড়ে ৫০-৯০ শতাংশ কম দামে ওষুধ পওয়া যায়। প্রায় ১৮০০ রকমের ওষুধ এবং ৪০০-র মতো মেডিক্যাল ডিভাইস পাওয়া যায় ঐ কেন্দ্রগুলি থেকে। ফলে সারাদেশ জন-ঔষধি কেন্দ্রের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এজন্যই কেন্দ্রীয় সরকার দেশজুড়ে আরও বেশী সংখ্যক জন- ঔষধি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা কেরেছে। আর এই বিষয়ে তুরুপের তাস হিসেবে রেশন দোকানকেই বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের রেশন দোকানের(Fair Price Shop) সাথে জন-ঔষধি কেন্দ্র খোলার মূল উদ্দেশ্য হল মূলত- প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদান এবং গ্রামীন অঞ্চলে ওষুধ ও অনান্য চিকিৎসা-উপকরন প্রাপ্তির সমস্যার সমাধান।
Table of Contents
ভূমিকা
ভারত সরকারের উদ্যোগে রেশন দোকানে(Fair Price Shop) ঔষধ বিক্রি একটি নতুন এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে। বর্তমান সময়ে জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ সহজলভ্য করা অত্যন্ত জরুরি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সস্তায় এবং সহজে ঔষধ পাওয়া নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেক্ষাপট
দেশের এমন অনেক অনেক অঞ্চল আছে, যেখানে ঔষধ প্রাপ্তির সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে এই সমসা আরও তীব্র । ঐ সমস্ত অঞ্চলের মানুষজন প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ সমূহ অনেক সময় পান না। সখানে এই জন-ঔষধি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ভারতে সাধারণ মানুষের সঠিক চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি অনেকাংশে নির্ভর করে তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের উপর। গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঔষধের অভাব এবং উচ্চ মূল্য অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে রেশন দোকানে(Fair Price Shop) ঔষধ বিক্রির পরিকল্পনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়েছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
১. স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা: ভারতের প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করা। ২. গ্রামীণ এলাকায় ঔষধ প্রাপ্তি: গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ঔষধ সহজলভ্য নয়, সেখানে ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করা। ৩. স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি: স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো এবং জনগণকে ঔষধ ব্যবহারে সঠিক তথ্য প্রদান করা।
রেশন দোকানের(Fair Price Shop) বর্তমান অবস্থা
রেশন দোকানগুলো(Fair Price Shop) সাধারণত খাদ্যশস্য, চিনি, কেরোসিন ইত্যাদি সস্তায় সরবরাহ করে। তবে এখন এসব দোকানকে আরও কার্যকর এবং বহুমুখী করার উদ্দেশ্যে সেখানে ঔষধ সরবরাহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ রেশন দোকানগুলোর কার্যকারিতা এবং ব্যবহারিক মূল্য বাড়াবে।
এই পদক্ষেপটি কার্যকর হলে রেশন ডিলারাও ব্যাবসায় উণ্ণতি করবে।
রেশন দোকানের সাথে জন-ঔষধি কেন্দ্র খোলা হলে একটি একক স্থান থেকেই উভয় পরিষেবা পরিচালিত হবে। এই ব্যাবস্থাটি মানুষের খুবই সুবিধাজনক হয়ে উঠতে পারে
পরিকল্পনার প্রধান উপাদান
১. নিয়মিত ঔষধ সরবরাহ: রেশন দোকানগুলোতে(Fair Price Shop) প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়। ২. ঔষধের তালিকা: সাধারণত ব্যবহৃত এবং প্রয়োজনীয় ঔষধের একটি তালিকা তৈরি করে তা রেশন দোকানগুলোতে প্রাপ্য করা। ৩. মূল্য নিয়ন্ত্রণ: ঔষধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা। ৪. প্রশিক্ষণ: রেশন দোকানের কর্মীদের ঔষধ ব্যবস্থাপনা এবং বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া।
চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা
১. লজিস্টিক্স: ঔষধ সরবরাহ এবং সঠিকভাবে বিতরণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে। 2. সংরক্ষণ: ঔষধের সঠিক সংরক্ষণ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধের ব্যবস্থাপনা। 3. বৈধতা: ঔষধ বিক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স এবং অনুমোদন। 4. অসৎ ব্যবহার: ঔষধের অসৎ ব্যবহার এবং কালোবাজারি রোধ করা। 5. প্রশিক্ষণ অভাব: রেশন দোকানের কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব।
সম্ভাব্য সমাধান
১. সরবরাহ চেইন উন্নয়ন: উন্নত সরবরাহ চেইন ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার। 2. ঠাণ্ডা চেইন ব্যবস্থা: ঔষধ সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ঠাণ্ডা চেইন ব্যবস্থা। 3. নিয়মিত পরিদর্শন: নিয়মিত সরকারি পরিদর্শন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা। 4. অনলাইন পোর্টাল: একটি অনলাইন পোর্টাল বা অ্যাপ তৈরি করা যেখানে ঔষধের প্রাপ্যতা এবং মূল্য দেখা যাবে। 5. স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী: স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সচেতনতা এবং সঠিক তথ্য প্রদান।
সম্ভাব্য সুবিধা
১. স্বাস্থ্যসেবার প্রসার: গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা আরও প্রসারিত হবে এবং উণ্ণতি প্রাপ্ত হবে। 2. অর্থনৈতিক সাশ্রয়: সাধারণ মানুষের ঔষধের জন্য ব্যয় কমবে। 3. সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ: সঠিক সময়ে ঔষধ প্রাপ্তির মাধ্যমে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। 4. সামাজিক উন্নয়ন: স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হওয়ায় সামাজিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং জনগনের সুরক্ষা সুনিশ্চত হবে এবং জনগন আরও সহজে প্রাথমিক চিকিৎসার সুবিধা লাভ করবে।
উপসংহার
রেশন দোকানে(Fair Price Shop) ঔষধ বিক্রয়ের পরিকল্পনা ভারতের স্বাস্থ্যসেবা খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ী মূল্যে ঔষধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ সফল হবে এবং দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তিতে একটি নতুন বিপ্লব ঘটাবে।
সবশেষে জানাই এই পরিকল্পনার মূ্ল উদ্দেশ্যই হল দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় জন-ঔষধি কেন্দ্র স্থাপন করা এবং তার পরিষেবা সাধারন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। দেশের এমন অনেক প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে যেখানে কোনো ওষুধের দোকান বা প্রাথমিক চিকিৎসার কোনো ব্যাবস্থাই নেই। কিন্তু রেশনের দোকান(Fair Price Shop) রয়েছে। সেক্ষেত্রে রেশন দোকানে জন-ঔষধি কেন্দ্র স্থাপিত হলে ঐসব এলাকার গরীব ও মধ্যবিত্ত সাধারন মানুষ কমদামে ওষুধপত্র কিনতে পারবেন এবং খুবই উপকৃত হবেন। তাছাড়া রেশন ডিলারদেরও কিছু বাড়তি রোজগার হবে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং ভারতের স্বাস্থ্য খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয়, পরিকল্পনা এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ দেশের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।