Published By: Kingshuk Roy
Last Updated: 06 June, 2024, 8:15 am (IST)
বাঁকুড়া(Bankura): একসময় ঢাকা, কোলকাতা থেকেও ছাত্রছাত্রীরা বিদ্যালাভ করতে এখানে আসত। প্রতিষ্ঠানটি অনেকদিন আগেই শতবর্ষ পেরিয়েছে। ১১৯ বছরের প্রতিষ্ঠানটি আজও সমান দক্ষতার সাথে পঠন পাঠন চালিয়ে যাচ্ছে।
Table of Contents
বাঁকুড়া(Bankura) জেলার মালিয়াড়া রাজনারায়ন উচ্চ বিদ্যালয়: এক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বাঁকুড়া(Bankura) জেলায় বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা এবং প্রাথমিক যুগ
আমাদের রাজ্যের যে সমস্ত গৌরবাণ্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার বেশিরভাগই কোন না কোন রাজা বা জমিদাররা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এক্ষেত্রেও অন্যথা নয়। বাঁকুড়া(Bankura) জেলার বড়জোড়া থানার অর্ন্তগত মালিয়াড়ায় রাজা ছিলেন রাজনারায়ন চন্দ্রাধূর্জ। তিনি ছিলেন একজন বিদ্বান ও সমাজসেবক। তিনি স্বপ্ন দেখতেন তার এলাকার ছেলেমেয়েরা যাতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সেজন্য একটি উচ্চ মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার। তিনি তাঁর স্বপ্নকে বস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ১৯০৫ সালে মালিয়াড়ায়(Bankura) একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। স্কুলভবনটি স্থাপনের জন্য তিনি ১৮ বিঘা জমি ও যথাসাধ্য টাকা দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বিভণ্ণ আসবাবপত্র দিয়ে স্কুলভবনটিকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর উদ্দশ্য ছিল শিক্ষার প্রসার এবং সমাজের উন্নয়ন। পরবর্তীকালে এই স্কুলটির নাম হয় মালিয়াড়া রাজনারায়ন উচ্চ বিদ্যালয়।
আজ বিদ্যালয়টি ১১৯তম বর্ষে পদার্পন করেছে। এই স্কুলের পঠন পাঠন শেষ করে পরবর্তীকালে অনেক গুনীজন সমাজের বিভিণ্ণক্ষেত্রে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। একসময় স্কুলটিতে স্থানীয় ছাত্রাছাত্রী ছাড়াও খুব দূরপ্রান্তের ছাত্রছাত্রীরাও এখানে বিদ্যালাভের জন্য আসত। রাজা রাজনারায়ন দূরপ্রান্তের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও ভেবেছিলেন। তিনি স্থাপন করেছিলেন একটি খুবই সুন্দর হোস্টেল। এর জন্য তিনি আরও জমি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দান করেছিলেন। পরবর্তীকালে হোস্টেলটির জন্য জমি দান করেছিলেন মালিয়াড়া গ্রামের(Bankura) একদা বাসিন্দা এবং ঐ স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র সুপ্রিম কোর্টটের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তরুণ চ্যাটার্জির পরিবার।
শিক্ষা দানের আদর্শ এবং লক্ষ্য
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা। রাজনারায়ন উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক ও মানসিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এখানে বিজ্ঞান, গণিত, সাহিত্য, ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর শিক্ষাদান করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হতে পারে।
শিক্ষা কার্যক্রমের উন্নয়ন
১৯২০ এর দশকে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রমে অনেক পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটে। নতুন নতুন বিষয় ও পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পাশাপাশি বিদ্যালয়ে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, নাটক, সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়।
১৯২৭ সালে ঐ বিদ্যালয়ের ছাত্র তারাপদ চক্রবর্তী প্রবেশিকা পরীক্ষায় বিহার, অসম-সহ সমগ্র অবিভক্ত বাংলার মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। যার সুনাম সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর এর ঠিক পর থেকেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কোলকাতা ছাড়াও আরও দূরদূরান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখানে শিক্ষালাভের জন্য আসতে শুরু করে। শৈলজা প্রসাদ চ্যাটার্জি প্রথম প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি স্কুলটির উণ্ণয়নে যথাসাধ্য চেষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর আমলে শিক্ষার মানও ছিল উণ্ণত। তব স্থানীয় প্রবীনদের মতে, ঐ বিদ্যালয়ের পঠনপাঠনের মান উণ্ণতির শিখরে পৌঁছেছিল বিদ্যালয়ের চতুর্থ প্রধান শিক্ষক রমনীমোহন মিত্রের সময়কালে। বর্তমানে স্কুলটি উচ্চ-মাধ্যমিকে উণ্ণীত এবং কলা ও বিজ্ঞান বিভাগেরও পঠন পাঠন হয়। ছাত্রছাত্রীর মোট সংখ্যা ৯০০।
১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল: একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগ
১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়টির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সময়। এই সময় বিদ্যালয়টির অবকাঠামো এবং শিক্ষার মান উভয়ই উন্নত হয়। বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়, যা আধুনিক শিক্ষা দানের উপযোগী করে তোলা হয়। সেই সঙ্গে আরও শিক্ষকের নিয়োগ দেওয়া হয়, যারা শিক্ষার্থীদের উন্নত পাঠদানে সহযোগিতা করে।
১৯৯০ এর পর: আধুনিকায়নের পথে
১৯৯০ এর পর বিদ্যালয়টি আধুনিকায়নের পথে এগিয়ে যায়। এই সময় বিদ্যালয়ে বৈজ্ঞানিক ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাব এবং লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীরা আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে। এছাড়াও, বিদ্যালয়ে পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
বর্তমানে মালিয়াড়া রাজনারায়ন উচ্চ বিদ্যালয়(Bankura) একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। বিদ্যালয়টি উচ্চমানের শিক্ষাদান, উন্নত অবকাঠামো এবং শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন।
এই স্কুলেরই বহু প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী সমাজের বিভণ্ণক্ষেত্রে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। কেউ হয়েছেন কলেজর অধ্যক্ষ। কেউ হয়েছেন কলেজের অধ্যাপক। কেউ কর্পোরেশনের মেয়র, তো কেউ বিধায়ক। কেউ হয়েছেন সাংসদ, তো কেউ আইপিএস, এমনকি মন্ত্রীও পর্যন্ত হয়েছেন। এছাড়াও, আরও বিভিণ্ণ ক্ষেত্রে এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রাছাত্রীরা উচ্চস্থান দখল করেছেন।
সমাপ্তি
মালিয়াড়া রাজনারায়ন উচ্চ বিদ্যালয়(Bankura) শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি ঐতিহ্যের প্রতীক। ১১৯ বছর ধরে এই বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে এবং সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিদ্যালয়টি আগামী দিনেও তার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রেখে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষার পথে আলোকিত করবে।
সমগ্র বাঁকুড়া(Bankura) জেলায় শিক্ষার মানোণ্ণয়ে এই স্কুলের অবদান অনস্বীকার্য। শতবর্ষ অতিক্রান্ত এই বিদ্যালয়টি আজ মহীরুহে পরিনত হয়েছে।