Published By: Anjan Majumder
Last Updated: 8 June, 2024, 12:30 pm (IST)
কৃষ্ণনগর: কাঁটাতার তো মানুষের দেওয়া একটি প্রাচীর। যে প্রাচীর দুটি দেশকে আলাদা করতে পারে, কিন্তু দুই দেশের মানুষকে আলাদা করতে পারে না। বাংলাদেশ(Bangladesh) এর দুই বৃদ্ধার প্রবল ইচ্ছা শক্তিতে এই প্রাচীর কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে গেল। এই কাজে ভারত এবং বাংলাদেশ, দুই দেশেরই সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পদক্ষেপ খুবই উচ্চ প্রশংসনীয়।
আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে ভারত এবং বাংলাদেশ(Bangladesh) দুটি আলাদা রাষ্ট্র। সেদিক থেকে দেখলে দুটি দেশ স্বতন্ত্র। আলাদা বলতে এটুকুই। আর সব কিছুই এক। ভারতের অঙ্গ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ পাশাপাশি অবস্থানকারী দুই বাংলা। এই দুই বাংলার মাঝে শুধু আন্তর্জাতিক সীমানা বা প্রাচীর বা বেড়া বা কাঁটাতার। যেহেতু দুই বাংলা, তাই দুটি জায়গার জলবায়ু এক, মানুষজন এক, ভাষা এক, খাদ্যাভাস এক,পোষাক-পরিচ্ছদ এক, সংস্কৃতি এক এবং আরও সব কিছুই এক। সব কিছুই এক হয়েও, আন্তর্জাতিক নিয়ম দুই বাংলার মানুষকে আলাদা করে রেখেছে।
Table of Contents
আবেগ এবং যাত্রা:
বিবাহ সূত্রে ঐ দুই বাংলাদেশী বৃদ্ধা থাকেন বাংলাদেশের চুঁয়াডাঙা জেলার গয়েশপুরে। আর উনাদের মা, সাকিনা বেওয়া থাকতেন এপারে ভারতের, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাংলাদেশ(Bangladesh) সীমান্তবর্তী গ্রাম বানপুরে। বার্ধক্য জনিত কারণে সাকিনা বেওয়া(৯২)-র মৃত্যু হয়। সাকিনা বেওয়া(৯২)-র মৃত্যুর খবর এদিনই ওপারে, বাংলাদেশে থাকা দুই মেয়ের কাছে পৌঁছয়।
এতে ওনার দুই মেয়ে মাকে শেষবারের মতো দেখার জন্যে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন এবং ভারতে যাওয়ার মন স্থির করেন। কিন্তু তাদের কোন পাসপোর্ট নেই। তাদের বয়স অনেক হয়েছে এবং শরীরও সঠিকভাবে কাজ করছে না। ভারতের নদীয়া জেলায় যাওয়ার কোনরকম উপায় করতে না পেরে তাঁরা শেষ পর্যন্ত বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ বা বিজিবির ক্যাম্পে হাজির হন। এবং ক্যাম্পে গিয়ে পুরো বিষয়টি সবিস্তারে জানান।
চ্যালেঞ্জ ও সহানুভূতি:
যেহেতু আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই দুই দেশের মধ্যে সীমানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সংঘটিত হয় এবং সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় । দুই দেশের মধ্যে এতো সব মিল থাকা সত্ত্বেও, দুই দেশের মানুষদের মধ্যে যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা আরও অন্যান্য আদান-প্রদান প্রায় সব কিছুই আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই পরিচালিত হয়। তাই এক দেশের বাসিন্দা কে অন্য দেশে প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন পড়ে বাসিন্দার নিজ দেশের পাসপোর্ট এবং আরও অন্যান্য কিছু কাগজ পত্রের। কোন অননুমোদিত ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
কিন্তু বিজিবির কর্মকর্তারা ঐ দুই বৃদ্ধার কথা শুনে বুঝতে পারলেন যে, সত্যিই তাঁরা তাদের মাকে দেখতে চাচ্ছেন।
মানবতার জয়:
বিজিবির(Bangladesh) প্রধান কর্মকর্তা দ্রুত তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেন। তারা বিএসএফ(ভারত) এর সাথে যোগাযোগ করেন। দুই দেশের সেনাবাহিনী ঐ সময় মানবিক দিকটি বিবেচনা করে একটি বিশেষ সমাধানের কথা ভাবেন।
বিএসএফ ও বিজিবির(Bangladesh) মধ্যে আলোচনায় শেষ পর্যন্ত স্থির হয়, বিএসএফ সাকিনা বেওয়ার কফিন বন্দি দেহ জিরো পয়েন্টে এনে রাখবে এবং সেখানে এসে বাংলাদেশে থাকা ওনার দুই মেয়ে তা দর্শন করতে পারবে।
শেষকৃত্যে উপস্থিতি:
সেইমতো পরেরদিন সকালে সাকিনা বেওয়ার কফিন বন্দি দেহ জিরো পয়েন্টে এনে রাখা হয় এবং ওনার দুই মেয়ে পাসপোর্ট ছাড়াই বাংলাদেশ(Bangladesh) থেকে জিরো পয়েন্টে এসে শেষ বারের মতো মায়ের মুখ দেখেন। তাদের মন ভারাক্রান্ত, কিন্তু তারা একদিকে স্বস্তি পান যে শেষবারের মতো তারা তাদের মাকে দেখেছেন। দুই বৃদ্ধার চোখে কৃতজ্ঞতার অশ্রু ঝরতে থাকে, তাদের মনে একটি গভীর শান্তি নেমে আসে। এই ঘটনায় সীমান্তবর্তী দুই পারের মানুষজন কিছু সময়ের জন্য খুবই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন।।
ভারতীয় ও বাংলাদেশী(Bangladesh) সীমান্তরক্ষী বাহিনী, যারা মানবতার খাতিরে এই ব্যাতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তাদের এই মহানুভবতা দুই দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে একটি উদাহরণ হয়ে রইল। মানবতার জয় হলো, সীমান্তের দেয়ালগুলোকে অতিক্রম করে।
ভারত ও বাংলাদেশ(Bangladesh) মৈত্রী:
এই ঘটনার পর, দুই দেশের সরকার ও সেনাবাহিনীর মাঝে একটি নতুন সম্পর্কের সূচনা হলো। তারা বুঝতে পারলেন, মানবিক বিষয়গুলোতে একে অপরকে সহায়তা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঘটনাটি দুই দেশের মানুষের মাঝে একটি ইতিবাচক বার্তা প্রেরণ করলো। সীমান্তের কাঁটাতারের পেছনে থাকা মানুষেরা জানলো, সীমান্তরক্ষী বাহিনী শুধুমাত্র কঠোর নয়, তারা মানবিকও হতে পারে।
শেষ কথা:
দুই বাংলাদেশী বৃদ্ধা জানলেন, মানবতার জয় সবসময় হয় এবং মানুষের মধ্যে ভালবাসা ও সহানুভূতি সবসময় প্রাধান্য পায়।
এই ঘটনা সীমান্তের দুই পাশের মানুষদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতির বন্ধন আরও দৃঢ় করবে।