Published by: Arup Mondal
Last Updated: 9 June, 2024, 11:30am (IST)
ক্যানিংঃ- সুন্দরবনের(Sundarban) বাঘের হামলা একটি সাধারণ ঘটনা হলেও, প্রত্যেকটি ঘটনা একজন ব্যক্তির জীবনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি সুন্দরবনের (Sundarban) একটি গ্রামে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একজন মৎস্যজীবী বাঘের হামলায় গুরুতর আহত হন। ঘটনাটি যেমন হৃদয় বিদারক, তেমনই সাহসিকতার দৃষ্টান্ত।
গুরুতর জখম মৎস্যজীবী প্রায় দুই সপ্তাহ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনি শহরতলীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
Table of Contents
বনের (Sundarban) মধ্যে হামলার দিন
আমাদের রাজ্যের দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবনের (Sundarban) মানুষের প্রধান জীবিকাই হল মৎস্য শিকার, জঙ্গলে গিয়ে মধু সংগ্রহ এবং বনের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট নদীতে গিয়ে কাঁকড়া ধরা। এমনই হতভাগ্য মানুষদের ছোট একটি দল কাঁকড়া শিকার করার জন্য গভীর জঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল।
সুন্দরবনের (Sundarban) একদম প্রতন্ত্য অঞ্চল ছোটো মোল্লাখালির বাসিন্দা জগদীশ ও তাঁর দুই সঙ্গী গত ফেব্রুয়ারি মাসে চামটা জঙ্গলে গিয়েছিলেন কাঁকড়া শিকার করতে। আক্রান্ত মৎস্যজীবি জগদীশবাবু জানিয়েছেন ” আমরা ঐ জঙ্গলে পৌঁছে জাল ফেলে কিছুসময় কাঁকড়া ধরছিলাম, হঠাৎই আচমকা জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আমার ঘাড়ে ও পিঠে থাবা বসায়। বাকী দুই সঙ্গীও বেসামাল হয়ে পড়ে। তারা আমাকে কোনওরকমে বাঘের মুখ থেকে বাঁচিয়ে আনে। ঘটনাস্থলেই আমার প্রাণ সংশয় হয়েছিল।কারন প্রচুর রক্তক্ষর হয়েছিল। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় আমি আমার জীবন ফিরে পেলাম।
জীবন-মৃত্যুর লড়াই
বাঘের আক্রমণে জগদীশবাবু প্রচণ্ডভাবে জখম হন। এবং তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে খুব রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়। তাঁর অবস্থা ছিল সংকটজনক। তার সঙ্গীরা তৎক্ষণাৎ চিৎকার শুরু করেন এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে বাঘটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন।
হাসপাতালে যাত্রা
জগদীশবাবুর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিল। তাঁর সঙ্গীরা তাকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নৌকা চালিয়ে নদীপথে ও সড়কপথে বহু কষ্টের পর তারা জগদীশবাবুকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছান। হাসপাতালে পৌঁছানোর পরপরই চিকিৎসকরা জগদীশবাবুর অবস্থা দেখে তাকে জরুরি চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা
স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা জগদীশবাবুর অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের যন্ত্রে সংযুক্ত করেন। জগদীশবাবুকে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং সার্জারি করে তাঁর ক্ষতগুলি সেলাই করা হয়। চিকিৎসকরা তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসা দেন।
সুস্থ হয়ে ওঠাচিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টায় এবং জগদীশবাবুর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে, তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর অবস্থার উন্নতি হয় এবং তিনি শারীরিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠেন।
অতীতে বাঘের হামলায় যেসব মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়েছে, সেগুলির অন্যতম কারন ছিল মাত্রারিক্ত রক্তক্ষরণ।এক্ষেত্রে জগদীশবাবুর ঘটনা তাই সবাইকে অবাক করেছে। চিকিৎসকদের মতে উনি খুব শীঘ্রই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবেন।
হাসপাতাল থেকে মুক্তি
এক মাস পর, জগদীশবাবু পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে সক্ষম হন। তাঁর বাড়ি ফেরার সময় গ্রামবাসীরা তাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ছিলেন। জগদীশবাবুর ফিরে আসা ছিল তার পরিবারের জন্য এক বড়ো উৎসবের দিন। গ্রামবাসীরা তাঁকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
জীবন ও জীবিকা
জগদীশবাবুর জীবনের এই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয় যে, সুন্দরবনের (Sundarban) জঙ্গলে মাছ ধরা যেমন জীবিকার প্রয়োজন, তেমনই জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জগদীশবাবুর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গ্রামবাসীরা আরও সতর্ক হয়ে হবেন। তারা প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং বন্য প্রাণীদের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করার উপায়গুলি নিয়ে আরও বেশি সচেতন হবেন।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
জগদীশবাবুর এই ঘটনা সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্মকর্তারা জগদীশবাবুর ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার জন্য নতুন কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তারা মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কিভাবে বাঘের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়।
উপসংহার
জগদীশবাবুর ফিরে আসা তার পরিবারের জন্য যেমন খুশির খবর, তেমনই সমগ্র গ্রামবাসীর জন্য একটি উদাহরণ। এই ঘটনা তাদের জীবনের বিপর্যয় থেকে পুনরুদ্ধারের গুরুত্ব বোঝায়। জগদীশবাবুর সাহসিকতা ও চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টা সুন্দরবনের (Sundarban) জীবনের কঠিন বাস্তবতা ও মানবিকতার শক্তিকে তুলে ধরে।
এটি একটি প্রমাণ যে, মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে, তবে তাদের সতর্কতা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রতি সচেতনতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।