Published By: Subhra Chatterjee
Last Updated: July 06, 2024, 9:30 pm (IST)
কোলকাতাঃ রথযাত্রা(Rath Yatra) বাংলার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব এবং এটি মূলত হিন্দুদের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে পরিচিত। রথযাত্রা শব্দের অর্থ রথের যাত্রা বা রথের অভিযান। এই উৎসবটি মূলত ভগবান জগন্নাথ, তাঁর ভাই বলরাম (বলভদ্র), এবং বোন সুভদ্রার প্রতি নিবেদিত, এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে এর বিশেষ উদযাপন দেখা যায়। বাংলার রথযাত্রা তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এবং জাঁকজমকপূর্ণ।
Table of Contents
রথযাত্রার(Rath Yatra) ইতিহাস ও উৎস
রথযাত্রার প্রাচীন ইতিহাস প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো। এর প্রামাণ্য ইতিহাস ও উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন পুরাণ, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ঐতিহাসিক নথিতে। রথযাত্রা প্রধানত ওড়িশার পুরী মন্দিরে উদযাপন করা হলেও বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এর প্রচলন আছে। বাংলায় রথযাত্রা প্রথম উদযাপিত হয় কোন সময়ে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন, কথিত আছে যে ১০৭৮ খ্রিস্টাব্দে পুরির জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই রথযাত্রার সূচনা হয়। এটি স্পষ্ট যে অনেক শতাব্দী ধরে এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ধর্মীয় জীবনের অংশ।
রথযাত্রার প্রস্তুতি
রথযাত্রার(Rath Yatra) প্রস্তুতি শুরু হয় রথ নির্মাণ থেকে। বড় বড় কাঠের রথ তৈরি করা হয় যেগুলি অত্যন্ত কারুকার্যমণ্ডিত এবং সাধারণত আট চাকা বিশিষ্ট হয়। প্রতিটি রথের উপর ভগবান জগন্নাথ, তাঁর ভাই বলরাম এবং বোন সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করা হয়। রথগুলি সাজানো হয় সুন্দর রঙিন কাপড়, ফুল এবং বিভিন্ন অলঙ্কারে। রথ তৈরি করতে কারিগরদের কয়েক মাস লেগে যায় এবং এর জন্য বিশাল অর্থ ও শ্রমের প্রয়োজন হয়।
রথযাত্রার দিন
রথযাত্রার(Rath Yatra) দিনটি খুবই বিশেষ এবং এটি আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে উদযাপিত হয়। এই দিনে ভক্তরা ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পবিত্র বস্ত্র পরিধান করেন। এরপর ভগবান জগন্নাথের পূজা করা হয় এবং তাঁর মূর্তিগুলি মন্দির থেকে বের করে আনা হয়। মূর্তিগুলি বিশাল রথের উপর স্থাপন করা হয় এবং রথযাত্রা শুরু হয়।
রথ টানার প্রথা
ভক্তরা মনে করেন যে রথ টানলে তাদের পুণ্য লাভ হয়। হাজার হাজার ভক্ত একসাথে রথের দড়ি ধরে টানেন এবং রথ গড়িয়ে যায় মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে। রথযাত্রার(Rath Yatra) সময় রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য ভক্ত জড়ো হন এবং রথকে অভ্যর্থনা জানান। ভক্তরা চিৎকার করে “জয় জগন্নাথ” ধ্বনি দিয়ে পূর্ণ করেন চারিদিক। রথযাত্রার এই দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর এবং আধ্যাত্মিক অনুভূতিতে ভরপুর।
রথযাত্রার(Rath Yatra) গুরুত্ব
রথযাত্রা(Rath Yatra) শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উৎসবের মাধ্যমে ভক্তরা একত্রিত হন এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয়। বিশেষ করে গ্রাম্য এলাকায় রথযাত্রা খুবই জনপ্রিয় এবং এর মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনে এক ধরনের উত্সাহ ও আনন্দের সঞ্চার হয়। এছাড়াও, রথযাত্রা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা, হস্তশিল্প এবং খাদ্য সামগ্রীর বিক্রি বেড়ে যায় এই সময়।
অর্থনৈতিক প্রভাব
রথযাত্রার(Rath Yatra) সময় বাংলার বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই সব মেলাতে বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। এর ফলে স্থানীয় ব্যবসা, হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলি লাভবান হয়। বিভিন্ন হস্তশিল্প এবং স্থানীয় পণ্য বিক্রির সুযোগও তৈরি হয়। এই উৎসব অর্থনৈতিকভাবে স্থানীয় অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
রথযাত্রা(Rath Yatra) ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উৎসবের মাধ্যমে ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটে। রথযাত্রার সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য ও সংগীতের আয়োজন করা হয় যা পর্যটকদের আকৃষ্ট
বাংলার বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রা
বাংলার বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রা(Rath Yatra) উদযাপিত হয় এবং প্রতিটি স্থানের রথযাত্রার কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন মেদিনীপুরের রথযাত্রা, মাহেশের রথযাত্রা, বিষ্ণুপুরের রথযাত্রা প্রভৃতি। সমগ্র মেদিনীপুর জেলার বিভিন্নস্থানে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যেগুলির মধ্যে কয়েকটি অতি প্রাচীন এবং সারা বাংলা জুড়ে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে, যেমন- মহিষাদলের রথযাত্রা। মাহেশের রথযাত্রা হলো বাংলার সবচেয়ে পুরনো এবং বিখ্যাত রথযাত্রাগুলির একটি। এখানে ৬০ ফুট উঁচু রথের মাধ্যমে ভগবান জগন্নাথের মূর্তি বহন করা হয়। বিষ্ণুপুরের রথযাত্রায় দারুণ কারুকার্যমণ্ডিত রথ দেখা যায় যা এখানকার কেশরীকান্ত জিউ মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ।
সমাপ্তি
বাংলার রথযাত্রা(Rath Yatra) একটি আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক মহোৎসব যা ধর্মীয় বিশ্বাস ও সামাজিক সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটায়। এই উৎসবের মাধ্যমে ভক্তরা তাঁদের প্রিয় দেবতার কাছে প্রার্থনা করেন এবং পুণ্য লাভের আশা করেন। বাংলার মানুষের জীবনে রথযাত্রার গুরুত্ব অপরিসীম, এবং এটি তাদের আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে তোলে। রথযাত্রার মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল দিক প্রতিফলিত হয়।