Published By: Subhra Chatterjee
Last Updated: 16 June, 2024, 11:30 am (IST)
Table of Contents
কোলকাতাঃ- অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স(Antibiotic Resistance), যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যার একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে, এই সামস্যার সামাধানে পারমিতা সেমগুপ্ত, সুজয় সাঁতরা, এবং ইন্দ্রনীল সামন্তের যৌথ উদ্যোগে এক আভিনব গবেষণা সম্প্রতি বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় আগামীদিনে এক নতুন পথ দেখাবে।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স(Antibiotic Resistance) গবেষণার পটভূমি
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি(এমআইটি) দ্বারা পরিচালিত বিশ্বখ্যাত ‘ট্রিনিটি চ্যালেঞ্জ’ স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে একটি প্রশংসিত প্রতিযোগিতা। তাতেই প্রায় তিন হাজার বিজ্ঞানীর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স(Antibiotic Resistance) নিয়ে এই বঙ্গসন্তানদের অভিনব গবেষণা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে।
‘ওয়ান হেলথ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল স্ট্যয়ার্ডশিপ ফর ইনফর্মাল-হেলথ সিস্টেম’ বা সংক্ষেপে ‘ওয়েসিস’ নামে যে বিজ্ঞানীদলটি এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে দ্বিতীয় পুরস্কারের খেতাব জিতে নিয়েছে, সেই দলেরই অন্যতম সদস্য হলেন আমাদের রাজ্য প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির বিভাগীয় প্রধান ইন্দ্রনীল সামন্ত, কল্যাণী এইমসের কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক পারমিতা সেনগুপ্ত এবং জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা আইকিউ- এর সিইও সুজয় সাঁতারা। তাদের তৈরি অভিনব অ্যাপের মাধ্যেমে তাঁরা সন্ধান দিয়েছেন ওষুধ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের।
সারা বিশ্বের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ফান্ডিং সংস্থা হল এমএইটি-র ‘সলভ প্রোগ্রাম’। সেই কর্মসূচিরই অন্তর্ভুক্ত হল ‘ট্রিনিটি চ্যালেঞ্জ’, যেটি শুরু হয়েছিল অতিমারির সময়ে। প্রতি বছর নিত্য নতুন বিষয়ের উপর গবেষণার ফলাফল উপস্থাপিত করতে হয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দল গুলিকে। এবারের বিষয় ছিল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
গবেষণার রূপরেখা
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যপক হলেন মীনাক্ষী গৌতম, যিনি ওয়েসিসের মুখ্য গবেষক। তাঁর সঙ্গে এক সাথে কাজ করেছেন আমাদের ইন্দ্রনীল, পারমিতা এবং সুজয়।
এই প্রসঙ্গে ইন্দ্রনীল জানান, ওয়েসিসের আবির্ভাব ২০১৮ সালে। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সঙ্গে যৌথ গবেষণার অংশীদার হয় পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এখন সমস্ত জীবজগতের সবচেয়ে বড় সমস্যার কারণ তা নিয়ে কাজ শুরু করেন।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স(Antibiotic Resistance) হল এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, ফলে সংক্রমণের চিকিৎসা কঠিন হয়ে যায়। এই সমস্যার জন্য বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটছে এবং স্বাস্থ্যসেবা খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে অ্যান্টিবায়োটিক দিনের পর দিন মানুষের জীবন রক্ষা করে এসেছে, তা রেজিস্ট্যান্স হওয়ায় বিভিন্ন সংক্রমনের বিরুদ্ধে এখন আর ঠিক মতো কাজ করে না। জীবাণুগুলো তাদের চারিত্রিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিককে অকেজো করে দেয়।
এছাড়া প্রধান সমস্যা হল, কোন অ্যান্টিবায়োটিক কোন ক্ষেত্রে কাজ করবে কি করবে না তারও পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। সে জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ‘ অ্যান্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট’ উপর নির্ভর করতে হয়।
গবেষণার ফলাফল
আমাদের তিন বঙ্গসন্তান তাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে এমন একটি ডিজিটাল অ্যাপের নীলনকশা বর্ণনা করেছেন, যার মাধ্যেমে বাংলার কোন একটি নিদিষ্ট অঞ্চলের মানুষ বা পশুপাখির রোগের মুক্তির জন্য কোন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করলে দ্রুত এবং সঠিক ফল পাওয়া যাবে, তার আগাম সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
তাদের গবেষণার ফলাফল অভূতপূর্ব। এই অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে এমনটাই দাবি তাদের।
গবেষণার স্বীকৃতি
এই গবেষণা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাদের কাজ উপস্থাপন করা হয়েছে এবং তারা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এই গবেষণাকে সমর্থন এবং সহযোগিতার প্রস্তাব এসেছে।
গবেষক দলের সদস্যরা আরও জানাচ্ছেন, ‘ট্রিনিটি চ্যালেঞ্জ’ এ তাদের কাজের বিশ্বব্যাপী এমন নজির বিহীন সাড়া মেলায় তাঁরা এবার ‘অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধু’ নামের অ্যাপটিকে আরও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলবেন।
গবেষকদের আশা তাদের তৈরি অ্যাপ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স(Antibiotic Resistance) মোকাবিলায় রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বড় ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এই গবেষণার সাফল্য ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স(Antibiotic Resistance) মোকাবিলায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এর মাধ্যমে সংক্রমণের চিকিৎসায় দ্রুত নিরাময় এবং সঠিক ওষুধ প্রয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এই গবেষণার ফলে ভারতের স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান জগতেও একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে এবং এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
উপসংহার
কলকাতার এই ত্রয়ীর গবেষণা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স(Antibiotic Resistance) সমস্যার মোকাবিলায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তাদের উদ্ভাবনী কাজ স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান জগতে নতুন দিশা দেখাবে এমনটাই আশা করা যায়। এই সাফল্য শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলেই আশাবাদী সবাই।