Published By: Subhra Chatterjee
Last Updated: 11 June, 2024, 9:30 am (IST)
কোলকাতাঃ– রাজ্য জুড়ে তাপপ্রবাহ(Heatwave) অব্যাহত থাকায় রাজ্যবাসী প্রচণ্ড গরমে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছেন। বৈশাখের প্রথম লগ্নে যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছিল, তা ফের জৈষ্ঠ্যের শেষ লগ্নে ফিরে এসেছে। বৃষ্টির অভাবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে।
Table of Contents
রাজ্য জুড়ে তাপপ্রবাহ(Heatwave) অব্যাহত
আমাদের রাজ্যে তাপ প্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৈশাখের প্রথম লগ্নে যেমন তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছিল, তা ফের জৈষ্ঠ্যের শেষ লগ্নে ফিরে এসেছে। রাজ্যজুড়ে তীব্র দহন এবং বৃষ্টির অভাবে মানুষ অত্যন্ত কষ্টে রয়েছে। বৃষ্টির অনুপস্থিতিতে শুকনো গরমের প্রভাব বেশি অনুভূত হচ্ছে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন কঠিন হয়ে উঠেছে।
গরমের প্রভাব
তাপপ্রবাহের(Heatwave) কারণে বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে পৌঁছে গেছে। তীব্র গরমের কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে, এবং মানুষজন ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছে না। স্বাস্থ্যগত সমস্যাও বাড়ছে বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ মানুষেরা এই গরমের কারণে বেশি ভুগছেন। ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক এবং অন্যান্য গরমের রোগের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
বঙ্গে তাপমাত্রা
কোথায় | কত |
পানাগড় | ৪৪.১ |
পুরুলিয়া | ৪২.৫ |
বাঁকুড়া | ৪২.৩ |
ঝাড়গ্রাম | ৪০.৫ |
দমদম | ৩৯.৪ |
কৃষ্ণনগর | ৩৯.০ |
উলুবেড়িয়া | ৩৮.৫ |
তাপ প্রবাহের প্রভাব
তাপপ্রবাহের(Heatwave) এই পরিস্থিতিতে বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু এবং অসুস্থ মানুষেরা সব থেকে বেশী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পর্যাপ্ত জল পান করা, হালকা খাবার খাওয়া, সানপ্রোটেকশন ব্যবহার করা এবং বাইরে যাওয়ার সময় মাথায় টুপি বা ছাতা রাখা জরুরি।
এই তীব্র গরমের ফলে বিভিন্ন ধরনের যে সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে:
- স্বাস্থ্যগত সমস্যা: তাপ প্রবাহের কারণে ডিহাইড্রেশন, হিটস্ট্রোক এবং অন্যান্য তাপজনিত রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ মানুষেরা এই গরমের কারণে বেশি ভুগছেন।
- কৃষিতে প্রভাব: বৃষ্টির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শস্যক্ষেত্রে জল না পাওয়ায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে এবং কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
- জল সংকট: উচ্চ তাপমাত্রা এবং বৃষ্টির অভাবে জলস্তর কমে গেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় জল সংকট দেখা দিয়েছে।
- বিদ্যুতের চাহিদা: গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে, যার ফলে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
বৃষ্টির অভাব
বৃষ্টির অভাবে কৃষি কাজেও প্রভাব পড়েছে। কৃষকরা সময়মতো বীজ রোপণ করতে পারছেন না, যার ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলস্তর কমে যাওয়ার কারণে পানির সংকটও দেখা দিয়েছে। শহর এবং গ্রামাঞ্চলে পানীয় জল সংগ্রহ করতে মানুষজনকে কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
মৌসুমি বায়ু এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা
ভারতের মৌসুমি বায়ু সর্বপ্রথম কেরালা রাজ্যে প্রবেশ করে, এবং তারপর ধাপে ধাপে অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমি বায়ু সাধারণত জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পৌঁছায়। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই সপ্তাহের শেষ লগ্নে রাজ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর আগমনের সাথে সাথে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে এবং তাপ প্রবাহ কমে আসবে।
প্রস্তুতি ও প্রতিকার
তাপপ্রবাহ(Heatwave) এবং বৃষ্টির অভাবে মানুষজনের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন:
- পানীয় জল সরবরাহ: বিভিন্ন স্থানে পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। ট্যাঙ্কার বা মোবাইল ওয়াটার ইউনিটের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা যেতে পারে।
- স্বাস্থ্য সেবা: স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ডিহাইড্রেশন এবং হিটস্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ এবং প্রশিক্ষিত কর্মী থাকা জরুরি।
- জনসচেতনতা: তাপ প্রবাহের সময় কীভাবে সুস্থ থাকা যায় সেই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। প্রচুর পরিমাণে জল পান করা, হালকা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা, এবং দিনের তীব্র গরম সময়ে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া উচিত।
- বিদ্যুৎ সরবরাহ ও লোডশেডিং ব্যবস্থাপনা:বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার এবং বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে।
- বৃষ্টির জন্য প্রস্তুতি: মৌসুমি বায়ু আসার সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা হতে পারে। তাই ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক করা এবং জল নিকাশির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
উপসংহার
রাজ্যে তাপপ্রবাহ(Heatwave) এবং বৃষ্টির অভাবে জনজীবন অত্যন্ত কষ্টে রয়েছে। তাপপ্রবাহের এই কঠিন সময়ে মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। তবে আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এই সপ্তাহের শেষে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। মৌসুমি বায়ুর আগমনের সাথে সাথে রাজ্যে বৃষ্টি শুরু হলে তাপ প্রবাহ কমে আসবে এবং জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।